গ্রীষ্মকাল মানেই খরতাপ, ঘাম, ক্লান্তি আর প্রচণ্ড রোদের প্রকোপ। তবে শুধু অস্বস্তিই নয়, গ্রীষ্মকালের অন্যতম ভয়ংকর বিপদ হলো হিটস্ট্রোক। এটি এমন একটি শারীরিক অবস্থা যেখানে শরীরের তাপমাত্রা অত্যধিক বেড়ে গিয়ে শরীরের বিভিন্ন অঙ্গপ্রত্যঙ্গ ঠিকভাবে কাজ করা বন্ধ করে দেয়। অবহেলা করলে এটি প্রাণঘাতী পর্যন্ত হতে পারে।
তবে আতঙ্কিত হওয়ার কিছু নেই — কিছু সহজ এবং কার্যকর অভ্যাসের মাধ্যমে আপনি এবং আপনার পরিবার সম্পূর্ণভাবে হিটস্ট্রোকের ঝুঁকি থেকে নিজেকে রক্ষা করতে পারেন।
চলুন জেনে নিই এই গ্রীষ্মে আমাদের কী কী স্বাস্থ্যকর অভ্যাস গড়ে তুলতে হবে হিটস্ট্রোক প্রতিরোধে।
🧊 ১. পর্যাপ্ত পানি পান করুন
হিটস্ট্রোকের অন্যতম প্রধান কারণ হলো ডিহাইড্রেশন। যখন আমাদের শরীর পর্যাপ্ত পানি হারায় এবং সেই ঘাটতি পূরণ করা না হয়, তখন শরীরের তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণ করা কঠিন হয়ে পড়ে।
কী করবেন:
✓দিনে অন্তত ৮–১০ গ্লাস পানি পান করুন।
✓বাইরে যাওয়ার আগে এবং বাইরে থেকে ফিরে এসেই পানি পান করুন।
✓আপনি যদি অতিরিক্ত ঘামেন, তাহলে ওআরএস বা লবণ-চিনির পানিও পান করুন।
🥗 ২. ঠান্ডা ও হালকা খাবার খান
গ্রীষ্মকালে ভারী ও মশলাদার খাবার হজমে সমস্যা তৈরি করে এবং শরীরে আরও উত্তাপ সৃষ্টি করে। এই সময় সঠিক খাদ্যাভ্যাস আপনাকে ভেতর থেকে ঠান্ডা রাখবে।
পছন্দের খাবার:
✓শসা, তরমুজ, লাউ, ডাব, দই
✓ঠান্ডা স্যুপ, ফলের সালাদ
✓ভাজা পোড়া ও অতিরিক্ত তেল-মশলাযুক্ত খাবার এড়িয়ে চলুন
🧢 ৩. সঠিক পোশাক পরুন
সঠিক পোশাক শুধু ফ্যাশনের জন্য নয় — এটি আপনার শরীরকে তাপ থেকে সুরক্ষিত রাখতেও সাহায্য করে।
পোশাক নির্বাচন:
✓হালকা রঙের এবং ঢিলা-ঢালা সুতি কাপড় পরুন
✓বাইরে বের হলে সানগ্লাস, ছাতা বা ক্যাপ ব্যবহার করুন
✓পা ঢেকে রাখে এমন হালকা জুতা পরার চেষ্টা করুন
🕒 ৪. দুপুর ১২টা থেকে ৩টা পর্যন্ত রোদ এড়িয়ে চলুন
এই সময়টাতে সূর্যের তাপমাত্রা সবচেয়ে বেশি থাকে। সরাসরি রোদে বের হলে হিটস্ট্রোকের ঝুঁকি বাড়ে।
পরামর্শ:
✓জরুরি প্রয়োজন ছাড়া দুপুরের রোদে বাইরে বের হবেন না
✓কাজ থাকলে সকালে বা বিকেলে সেরে ফেলুন
✓অফিস বা স্কুলে যাওয়ার সময় ছাতা বা পানির বোতল সাথে রাখুন
🏠 ৫. ঘরের তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখুন
যারা দিনের বড় একটা সময় ঘরে থাকেন, তারাও হিটস্ট্রোকের ঝুঁকিতে থাকতে পারেন যদি ঘরের ভিতর বেশি গরম থাকে।
করণীয়:
✓জানালা খুলে রাখুন যাতে হাওয়া চলাচল করতে পারে
✓পর্দা ব্যবহার করুন যাতে সরাসরি রোদ না আসে
✓ঠান্ডা পানিতে পা ডুবিয়ে রাখা বা মাথায় ভেজা তোয়ালে রাখার অভ্যাস করুন
🚿 ৬. দিনে একাধিকবার গোসল করুন
গ্রীষ্মে শরীর ঠান্ডা রাখতে দিনে একবার নয়, বরং দুই বা তিনবার হালকা ঠান্ডা পানিতে গোসল করা খুবই উপকারী।
উপকারিতা:
✓শরীরের অতিরিক্ত তাপ কমে
✓মন ও শরীর উভয়েই সতেজ থাকে
✓ঘাম ও শরীরের দুর্গন্ধ দূর হয়
🏃♂️ ৭. শরীরচর্চা সকালে বা সন্ধ্যায় করুন
গরমে শরীরচর্চা করা উচিত, তবে সেটি কখন করবেন তা গুরুত্বপূর্ণ। ভুল সময়ে এক্সারসাইজ করলে হিটস্ট্রোক হতে পারে।
সতর্কতা:
✓সকাল ৬–৮টা বা সন্ধ্যা ৫টা পর এক্সারসাইজ করুন
✓খুব গরম জায়গায় ব্যায়াম করবেন না
✓এক্সারসাইজের পরপরই ঠান্ডা পানি পান না করে একটু বিশ্রাম নিন
👵 ৮. শিশু ও বৃদ্ধদের প্রতি বাড়তি যত্ন নিন
শিশু, বৃদ্ধ এবং অসুস্থ ব্যক্তিদের শরীরের তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণ করার ক্ষমতা তুলনামূলকভাবে কম, তাই তারা হিটস্ট্রোকের ঝুঁকিতে বেশি থাকে।
তাদের জন্য পরামর্শ:
✓তাদের প্রচুর পানি পান করাতে উৎসাহ দিন
✓হালকা ও পুষ্টিকর খাবার দিন
✓ঘন ঘন ঘামের পর গা মুছে দিন
✓বাইরে গেলে ছাতা বা মাথায় কাপড় দিন
🆘 হিটস্ট্রোকের লক্ষণগুলো জেনে রাখুন:
হিটস্ট্রোকের কিছু সাধারণ লক্ষণ:
• মাথা ঘোরা বা দুর্বল লাগা
• অতিরিক্ত ঘাম
• ত্বক শুকিয়ে যাওয়া
• শরীর ঠান্ডা হয়ে যাওয়া
• দ্রুত হৃদস্পন্দন
• বমি বমি ভাব বা বমি
• বিভ্রান্তি বা অচেতন হয়ে যাওয়া
এই উপসর্গ দেখা দিলে:
👉 সঙ্গে সঙ্গে ঠান্ডা জায়গায় নিয়ে যান
👉 শরীরে ঠান্ডা পানি দিন
👉 ওআরএস বা ইলেক্ট্রোলাইট দিন
👉 দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ নিন
